আবদুল্লাহ আল হৃদয়ঃ-
২৮ জুলাই, ২০২৫: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সিএনজি ও অটোরিকশা মালিক-শ্রমিকদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট দ্বিতীয় দিনে গড়িয়েছে। পুলিশি হয়রানি বন্ধ ও জেলার সর্বত্র অটোরিকশা চলাচলের অনুমতিসহ বিভিন্ন দাবিতে এই ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শনিবার (২৬ জুলাই) রাতে এই কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়, যার ফলে রোববার (২৭ জুলাই) সকাল থেকে জেলার অভ্যন্তরীণ সব রুটে সিএনজি ও অটোরিকশা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে কর্মজীবী, শিক্ষার্থী ও রোগীরা।
ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন সোমবারও জেলার বিভিন্ন স্থানে অবরোধ সৃষ্টি করে বিক্ষোভ করছেন সিএনজি মালিক ও চালকরা। জেলার প্রধান সিএনজি স্ট্যান্ডগুলো থেকে কোনো অটোরিকশা ছেড়ে যায়নি। অনেক জায়গায় ধর্মঘটে শ্রমিকরা অন্য যানবাহন, বিশেষ করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচলেও বাধা দিচ্ছে এবং যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরায় সিএনজি মালিক ও শ্রমিকরা মিছিল বের করে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
চরম দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ
ধর্মঘটের কারণে জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। শহর থেকে গ্রামে বা গ্রাম থেকে শহরে যাতায়াতের জন্য যানবাহন না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন হাজারো মানুষ। অনেকে পায়ে হেঁটে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের কষ্ট বেড়েছে বহুগুণ। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা সময়মতো কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারছেন না। জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনে হাসপাতালে যেতেও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগী ও তাদের স্বজনেরা।
এক যাত্রী জানান, “বিজয়নগর থেকে শহরে আসতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। চার-পাঁচবার গাড়ি বদল করে এ পর্যন্ত এসেছি।” আরেকজন বলেন, “সিএনজি বন্ধ, এমনকি অটোরিকশাও শহরে আসতে দিচ্ছে না। আমি নিজে সুহিলপুর থেকে হেঁটে এসেছি।”
চালক-মালিকদের অভিযোগ ও দাবি
সিএনজি ও অটোরিকশা চালক-মালিকদের প্রধান অভিযোগ ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা পুলিশি হয়রানি, অতিরিক্ত অর্থ আদায়, বিনা কারণে গাড়ি জব্দ ও লাইসেন্স সংক্রান্ত দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন। চালকদের অভিযোগ, শহরে প্রবেশ করলে ট্রাফিক পুলিশ তাদের বাধা দেয় এবং রোগী নিয়ে গেলেও গাড়ি আটকিয়ে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে, না দিলে হয়রানি করা হয়।
তাদের দাবিগুলো হলো:
অবৈধভাবে আটক করা শতাধিক সিএনজি অটোরিকশা শর্তহীনভাবে মুক্তি দিতে হবে।
পারমিট অনুযায়ী জেলার সব সড়কে (ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ব্যতীত) সিএনজি চলাচলের অনুমতি দিতে হবে।
ট্রাফিক পুলিশের হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।
লাইসেন্স নবায়ন ও রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সহজ ও দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে।
জেলা সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি বলেন, “দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই কর্মবিরতি চলবে।”
প্রশাসনের বক্তব্য
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক জানিয়েছেন, আইন অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন নবায়ন না থাকায় ৭০টির বেশি সিএনজি অটোরিকশা জব্দ করা হয়েছে। কাগজপত্র নবায়ন করা হলে সেগুলো ছেড়ে দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, মালিক-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং কেউ যদি পুলিশের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ও যুক্তিযুক্ত অভিযোগ দেন, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাধারণ মানুষ আশা করছেন, দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করে জনদুর্ভোগ লাঘব করার জন্য।
Leave a Reply