আবদুল্লাহ আল হৃদয়ঃ-
গতকাল ১০ই জুলাই, ২০২৫ তারিখে সারা দেশে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হৃদয়বিদারক খবর। আশানুরূপ ফল না পাওয়ায় বা অকৃতকার্য হওয়ায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে বলে জানা গেছে। এই মর্মান্তিক ঘটনাগুলো পুরো দেশে শোকের ছায়া ফেলেছে এবং শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষাবিদদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফলাফল প্রকাশের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলায় অন্তত পাঁচজন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে।এর মধ্যে হবিগঞ্জ, বগুড়া, কুমিল্লা, বরিশাল ও কক্সবাজারে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
সারাদেশের করুণ চিত্র:
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় ফারজানা আক্তার (১৬) নামে এক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পেরে নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। সে স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিল।
বগুড়ার শেরপুরে সুমাইয়া আক্তার (১৭) নামে আরেক পরীক্ষার্থী প্রত্যাশিত ফল না পেয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরিবারের সদস্যরা জানান, গণিতে এ প্লাস না পাওয়ায় তার মোট ফলাফলে গ্রেড কমে যায়, যা সে মেনে নিতে পারেনি।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় প্রভা নামের এক শিক্ষার্থী দুটি বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়ায় ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। তার বাবা প্রবাসে থাকেন এবং মেয়ের মৃত্যুর খবর শুনে দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বরিশাল বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করায় দুই ছাত্রীর আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া আরও তিনজন আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
কক্সবাজার সদর উপজেলায় প্রিয়তম রুদ্র নামে এক ছাত্র তার জন্মদিনের একদিন আগে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় আত্মহত্যা করে।
এ ছাড়াও দেশের আরও বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার চেষ্টার খবর পাওয়া যাচ্ছে। কুষ্টিয়ার খোকসায় এক ছাত্র ফেল করায় বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে, বর্তমানে সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ফলাফলের পরিসংখ্যান ও মানসিক চাপ:
এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৬৮.৪৫ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ কম। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যাও গত বছরের চেয়ে কমেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, পাসের হার কমে যাওয়া এবং ভালো ফলাফলের জন্য সামাজিক ও পারিবারিক চাপ অনেক শিক্ষার্থীর উপর মারাত্মক মানসিক প্রভাব ফেলেছে।
পরিবারের প্রত্যাশার চাপ, ভালো ফলাফলের মাধ্যমে সামাজিক মর্যাদা রক্ষার ভাবনা এবং সহপাঠীদের সাথে তুলনা অনেক শিক্ষার্থীর জন্য অসহনীয় হয়ে ওঠে। পরীক্ষায় ব্যর্থতাকে জীবনের চূড়ান্ত ব্যর্থতা হিসেবে দেখার প্রবণতা থেকেও শিক্ষার্থীরা এমন দুঃখজনক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে মনে করছেন মনোবিদরা।
বিশেষজ্ঞদের মতামত ও করণীয়:
মনোবিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের আত্মহত্যা প্রতিরোধযোগ্য। তাদের মতে, পরিবারের সহানুভূতিশীল আচরণ এবং শিক্ষকদের সঠিক শিক্ষার মান শিক্ষার্থীদের মানসিক শক্তি যোগাতে পারে। পরীক্ষায় ব্যর্থতা মানেই জীবনের শেষ নয়, এই বোধটি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে জাগিয়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।
Leave a Reply