বিশেষ পরিস্থিতি স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের অপসারণে অধ্যাদেশ জারির বিষয়ে একটি খসড়া অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ।
এতে এসব পদে প্রশাসক নিয়োগে সরকারের ক্ষমতাও যুক্ত করা হয়েছে।
গত ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর থেকে জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় আওয়ামী লীগ সমর্থক চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মেয়র, কাউন্সিলররা অনুপস্থিত থাকায় নাগরিক সেবা ব্যাহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব দেওয়ার এক আট দিনের মাথায় এ উদ্যোগ নিল।
শুক্রবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারির লক্ষ্যে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশগুলোর খসড়া অনুমোদন হয় বলে জানিয়েছে তথ্য অধিদপ্তর।
প্রস্তাবিত অধ্যাদেশগুলোর সংযোজনগুলো হচ্ছে-
সিটি করপোরেশন
===============
(১) জনস্বার্থে প্রস্তাবিত ‘স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯‘-এ দুইটি নতুন ধারা সন্নিবেশ করা হয়েছে। তা হল ধারা ১৩ক ও ধারা ২৫ক।
১৩ক। বিশেষ পরিস্থিতিতে মেয়র এবং কাউন্সিলরগণের অপসারণের ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতা
(১) এই আইনের অন্যান্য বিধানে কিংবা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার, অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে জনস্বার্থে কোনো সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং কাউন্সিলদেরকে অপসারণ করতে পারবে
(২) বিধি দ্বারা নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ, সরকারি গেজেটে আদেশ দ্বারা, উপধারা (১) এর মাধ্যমে বর্ণিত মেয়র এবং কাউন্সিলর-এর অপসারণ কার্যকর করিতে পারিবে।
২৫ক। বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রশাসক নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতা
(১) এই আইনের অন্যান্য বিধানে কিংবা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে, জনস্বার্থে কোনো সিটি করপোরেশনে নির্দিষ্ট মেয়াদ উল্লেখ করে অথবা পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত এর কার্যাবলি সম্পাদনের উদ্দেশ্যে একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত উপযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ দিতে পারবে।
(২) সরকার, প্রয়োজনবোধে, যথাযথ বলিয়া বিবেচিত হয় এমন সংখ্যক সদস্য সমন্বয়ে গঠিত কমিটিকে প্রশাসকের কর্ম সম্পাদনে সহায়তা প্রদানের জন্য নিয়োগ করতে পারবে।
(৩) উপধারা (১) অনুযায়ী নিযুক্ত প্রশাসক এবং উপধারা (২) অনুযায়ী নিযুক্ত কমিটির সদস্যবৃন্দ যদি থাকে, যথাক্রমে মেয়র ও
কাউন্সিলরের ক্ষমতা প্রয়োগ করবে।
পৌরসভা
=========
(২) প্রস্তাবিত ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ এ দুটি নতুন ধারা সন্নিবেশ করা হয়েছে। তা হলো ধারা ৩২ক ও ধারা ৪২ক।
ধারা-৩২ক। বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনায় জনস্বার্থে সরকার কোনো পৌরসভার মেয়র বা কাউন্সিলরকে অপসারণ করতে পারবে।
ধারা-৪২ক। বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনায় জনস্বার্থে সরকার কোনো পৌরসভায় একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত উপযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করতে পারবে।
জেলা পরিষদ
===========
(৩) প্রস্তাবিত ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪‘ এ দুইটি নতুন ধারা সন্নিবেশ করা হয়েছে। তা হলো ধারা ১০ক ও ধারা ৮২ক।
ধারা-১০ক। বিশেষ পরিস্থিতিতে চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের সরকার অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে, জনস্বার্থে অপসারণ করতে পারবে।
ধারা-৮২ক। বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে।
উপজেলা পরিষদ
=============+
(৪) ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪‘-এ প্রস্তাবিত ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪‘ এ দুইটি নতুন ধারা সন্নিবেশ করা হয়েছে। তা হলো ধারা ১৩ঘ ও ধারা ১৩ঙ।
১৩ঘ। বিশেষ পরিস্থিতিতে চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান বা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বা অন্য সদস্যগণকে অপসারণের ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতা এবং
১৩ঙ। বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রশাসক নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতা।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি ও তার সঙ্গে থাকা দলগুলোর বর্জনের কারণে স্থানীয় সরকারের সব প্রতিষ্ঠানে প্রায় সব জনপ্রতিনিধিই আওয়ামী লীগের বা দল সমর্থিত।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন থেকে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের অনেক গা ঢাকা দিয়েছেন। এ অবস্থায় স্থানীয় সরকারের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সরকারের অনেক প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর হয়েছে, কোথাও কোথাও অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে, হামলাও হয়েছে অনেক জনপ্রতিনিধির ওপর।
এ কার্যক্রম সচল রাখতে ইতোমধ্যে প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা দিয়ে অফিস আদেশও জারি করা হয়েছে।
দেশে বর্তমানে ১২টি সিটি করপোরেশন, ৬৪ জেলা পরিষদ, তিন শতাধিক পৌরসভা ও পাঁচ শতাধিক উপজেলা পরিষদে মেয়র, কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান রয়েছে কয়েক হাজার।
উপজেলা পরিষদ: চেয়ারম্যান ‘অনুপস্থিত’ হলে দায়িত্বে ইউএনও
=======================
স্থানীয় সরকারের অধীন উপজেলা পরিষদের বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধি আওয়ামী লীগের বা আওয়ামী লীগ সমর্থিত। দেশের যেসব উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অনুপস্থিত রয়েছেন, সেসব জায়গায় কার্যক্রম সচল রাখতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা দিয়েছে সরকার।
বুধবার স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানের সই করা অফিস আদেশে ইউএনওদের এ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। এর পরপরই দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের মেয়র, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের একটা বড় অংশ আত্মগোপনে চলে যান। কেউ কেউ দেশের বাইরে চলে যান৷
উপজেলা পরিষদ: চেয়ারম্যান ‘অনুপস্থিত’ হলে দায়িত্বে ইউএনও
========================
স্থানীয় সরকারের অধীন উপজেলা পরিষদের বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধি আওয়ামী লীগের বা আওয়ামী লীগ সমর্থিত
দেশের যেসব উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অনুপস্থিত রয়েছেন, সেসব জায়গায় কার্যক্রম সচল রাখতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা দিয়েছে সরকার।
বুধবার স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানের সই করা অফিস আদেশে ইউএনওদের এ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। এর পরপরই দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের মেয়র, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের একটা বড় অংশ আত্মগোপনে চলে যান। কেউ কেউ দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন।
স্থানীয় সরকারের অধীন উপজেলা পরিষদের বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধি আওয়ামী লীগের বা আওয়ামী লীগ সমর্থিত। এ অবস্থায় স্থানীয় সরকারের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। নাগরিকরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বুধবারের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, যেহেতু সম্প্রতি উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে বিভিন্ন উপজেলার অনেক চেয়ারম্যান ধারাবাহিকভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। যোগাযোগ করেও তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভাষ্য- উপজেলা পরিষদের অনেক প্যানেল চেয়ারম্যানও কর্মস্থলে ধারাবাহিকভাবে অনুপস্থিত রয়েছেন এবং তাদের সাথে যোগাযোগ করেও উপস্থিতি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা পরিষদে অনেক ধরনের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে এবং জনসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে।অফিস আদেশে বলা হয়েছে, “সেহেতু যে সকল সিটি করপোরেশনে এ রূপ পরিস্থিতি উদ্ভূত হয়েছে, সে সকল উপজেলা পরিষদে সব ধরনের জনসেবা অব্যাহত রাখা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলমান রাখার নিমিত্তে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের পুনরাদেশ না পাওয়া পর্যন্ত সাময়িকভাবে পূর্ণ আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করা হলো।”
১৪ আগস্ট থেকেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর বলে অফিস আদেশে বলা হয়েছে।
একইভাবে দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনে মেয়রের অনুপস্থিতিতে দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে নিতে প্রধান নির্বাহীদের (সিইও) হাতে ক্ষমতা দিয়ে আদেশ জরি করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
বুধবার সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ. এফ. হাসান আরিফ সাংবাদিকদের বলেন, দেশের সব জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের অনুপস্থিত চেয়ারম্যানদের তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তথ্য পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply