
আবদুল্লাহ আল হৃদয়ঃ-
২৯ অক্টোবর, বুধবার। বিজয়নগরের ইসলামপুর গ্রামের দক্ষিণ কাজীবাড়িতে তখনো সূর্যের আলো পুরোপুরি পৌঁছায়নি। দিন শুরুর প্রস্তুতি চলছিল পরিবারে। কে জানতো, এই দিনটিই এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কালো ছায়ায় ঢেকে দেবে কাজী পরিবার এবং ইসলামপুর গ্রামের অনেক স্বপ্নকে?
কাজী রেদোয়ান (২৪), পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান এবং তিন ভাইয়ের মধ্যে অন্যতম ভরসা। ইসলামপুর গ্রামের পরিচিত মুখ, সায়হাম কমপ্লেক্স মার্কেটে যার ‘মিস্টার ক্লাসি’ নামে কাপড়ের দোকান ছিল। ব্যবসার সুবাদে এলাকায় তার পরিচিতি ছিল, ছিল স্বপ্ন ভরা ভবিষ্যৎ। কিন্তু আজ দুপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বুধন্তী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় একটি পিকআপের সঙ্গে তার মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে থেমে গেল সব। অকালে ঝরে গেল একটি তাজা প্রাণ, নিভে গেল সম্ভাবনাময় এক যুবকের জীবন প্রদীপ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্ঘটনার ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে, রেদোয়ান ঘটনাস্থলেই গুরুতর আহত হন। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে দ্রুত উদ্ধার করে মাধবপুর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া না নিয়ে তাকে হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই রেদোয়ান শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
পরিবারের সদস্যরা এবং এলাকাবাসী এই খবর শুনে শোকে স্তব্ধ। মাত্র ২৪ বছর বয়সে রেদোয়ানের এমন আকস্মিক মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছেন না। তার বড় ভাই কাজী সামির, যিনি একই মার্কেটে দোকান চালান, তিনি যেন বাকরুদ্ধ। পরিবারের মাথার ওপর যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। রেদোয়ানের চলে যাওয়ায় কেবল একটি পরিবারের নয়, পুরো এলাকার মানুষ যেন গভীর শূন্যতা অনুভব করছেন।
খাটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানিয়েছেন, বুধন্তী এলাকায় মোটরসাইকেল ও পিকআপের সংঘর্ষে রেদোয়ান গুরুতর আহত হন। হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় দায়ী পিকআপটিকে আটক করা হয়েছে এবং মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
রেদোয়ানের এই অকাল প্রয়াণ শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি সতর্কবার্তা। মহাসড়কে প্রতিনিয়ত ঝরে যাচ্ছে অনেক স্বপ্ন, অনেক সম্ভাবনাময় জীবন। রেদোয়ানের মৃত্যু যেন আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কতটা জরুরি। ইসলামপুরের দক্ষিণ কাজীবাড়িতে এখন শুধুই বিষাদের সুর। রেদোয়ানের স্মৃতি আজীবন অম্লান হয়ে থাকবে প্রিয়জনদের হৃদয়ে।