আব্দুল্লার আল হৃদয়ঃ-
নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্তৃক ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৩ (সদর-বিজয়নগর) সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া প্রস্তাবের বিরুদ্ধে উত্তাল হয়ে উঠেছে বিজয়নগর উপজেলা। প্রস্তাবিত খসড়ায় উপজেলার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়নকে পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের সঙ্গে যুক্ত করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির ডাকে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ এবং ঘণ্টাব্যাপী মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
রবিবার (৩ জুলাই) ২০২৫ ইং তারিখ সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপজেলার চান্দুরা এলাকায় সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ অংশ নিয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। অবরোধের ফলে মহাসড়কের উভয় পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আন্দোলনকারীরা এক ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেন।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের ৩৯টি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রাথমিক গেজেট প্রকাশ করে। এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন থেকে বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তি, চান্দুরা ও হরষপুর ইউনিয়নকে বিচ্ছিন্ন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়। এই খসড়া প্রকাশের পরপরই বিজয়নগরজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রবিবার সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির আহ্বানে আয়োজিত বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ইমাম হোসেন। কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ডাক্তার রফিকুল ইসলাম, উপজেলা হেফাজতে ইসলামের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আফজাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি এনামুল হক বাশারী, মুফতী রহমতুল্লাহ, এনসিপির বায়েজিদ, উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ আহবায়ক ও বিআরডিবি’র ভাইস-চেয়ারম্যান ছায়েদ খন্দকার, সাবেক উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান লিটন মুন্সী,,উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক এ এএইচ এম গোলাম জহির, স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব খাবিবুর রহমান মনির, বিএনপি নেতা হেলাল, সাবেক ছাত্রদল নেতা সাইফুল ইসলাম ও তুহিন, চান্দুরা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী ইমরান, সাংগঠনিক সম্পাদক হেলাল উদ্দিন, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আলী হোসেন , জামায়াত ইসলামের চান্দুরা ইউনিয়ন সভাপতি মুহাম্মদ লুৎফুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শিহাব উদ্দিন, এনামুল হক, শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল কাদের মিয়া, ইছাপুর যুবদলের সভাপতি নূর মোহাম্মদ আরাফাত,হুমায়ূন কবির ভূইয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।
বিক্ষোভকারীরা “বিজয়নগর নিয়ে ষড়যন্ত্র রুখে দাও”, “বিজয়নগরের বিভক্তি মানি না”, “আমাদের দাবি মানতে হবে” ইত্যাদি স্লোগানে মহাসড়ক মুখরিত করে তোলেন। তারা এই সিদ্ধান্তকে বিজয়নগরের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার হলেও বিজয়নগরকে পূর্ণাঙ্গ মর্যাদায় একটি স্বতন্ত্র নির্বাচনী আসন হিসেবে গড়ে তোলা হয়নি। বিভিন্ন সময়ে সদর, সরাইল বা নাসিরনগরের সঙ্গে যুক্ত করে এই উপজেলার মানুষকে অবহেলিত করে রাখা হয়েছে। তারা বলেন, এই বিভক্তির কারণে উপজেলায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এবং এটি নিছকই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের ফল।
নেতৃবৃন্দ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বিজয়নগর উপজেলার অখণ্ডতা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে আরও কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। প্রয়োজনে রেলপথ ও সড়কপথ অবরোধের মতো কর্মসূচি দেওয়ারও হুমকি দেন তারা।
আন্দোলনের পাশাপাশি আইনি লড়াইয়ের অংশ হিসেবে গণস্বাক্ষর কর্মসূচিও শুরু হয়েছে। উপজেলার প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে সাধারণ মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে নির্বাচন কমিশনে আপত্তির আবেদন জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ১০ই আগস্ট পর্যন্ত এই খসড়া তালিকার ওপর আপত্তি, অভিযোগ ও সুপারিশ জানানো যাবে।
এ বিষয়ে বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে এবং কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
Leave a Reply