
আবদুল্লাহ আল হৃদয়ঃ-
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা ইউনিয়নের মিরপুর গ্রামে সরকারি রাস্তা দখলকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া এক নৃশংস হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন প্রবাসী কামাল মিয়া। বর্তমানে তিনি ঢাকা ইসলামিয়া হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। এই পৈশাচিক হামলার প্রতিবাদে এলাকাবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে এবং জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিজয়নগর থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সরকারি রাস্তার ওপর অবৈধভাবে বাউন্ডারি নির্মাণের প্রতিবাদ করেছিলেন মো. কামাল মিয়া (৪৫)। এই বিরোধের জেরে গত ২৮ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রতিপক্ষ সুলতান আহমেদ ও তার দলবল কামাল মিয়াকে রাস্তায় একা পেয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকারীরা রামদা, ছুরি, লোহার রড, বল্লম ও শাবলসহ মারাত্মক দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে। এতে কামাল মিয়ার মাথা, ঘাড়, হাত-পা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলার সময় কামাল মিয়া আমতলী বাজার থেকে চার লাখ টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। হামলাকারীরা তাকে আটকে রামদা দিয়ে মাথায় কোপ দেয় এবং তার ব্যাগে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেয়। তারা কামাল মিয়াকে হুমকি দেয় যে, মামলা করলে তাকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। কিন্তু তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি ঢাকা ইসলামিয়া হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন।
এই বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সকাল ১০টায় আমতলী বাজার থেকে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিজয়নগর থানা ঘেরাও করে এলাকাবাসী।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন—প্রবাসী নজরুল ইসলাম, লাল মিয়া সরদার, সাংবাদিক এস এম জহিরুল ইসলাম, প্রতিবাদী জহিরুল ইসলাম, বিআরডিবির ভাইস-চেয়ারম্যান সাইদ খন্দকার, ফরিদ আহমেদ খান, আলেপ খাঁ, ইসলাম মিয়া, মিজানুর রহমান ও অহিত মিয়া প্রমুখ।
বক্তারা হামলায় জড়িত সকল আসামিকে দ্রুত গ্রেফতার, সরকারি রাস্তা থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ এবং হামলার শিকার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান। তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যদি দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে তারা আরও বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবেন।
বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বিক্ষোভকারীদের আশ্বস্ত করে বলেন, হামলার ঘটনায় জড়িত আসামিদের গ্রেফতারসহ ন্যায়বিচার নিশ্চিতে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আহতের স্ত্রী আছমা আক্তার এই ঘটনায় সুলতান আহমেদ, আব্দুল কাদির, সারওয়ার রহমান, সাইফুল ইসলাম, তামীম মিয়া, রফিক মিয়া, তুষার মিয়া, মিশাল মিয়া, আরজিনা বেগমসহ নয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে বিজয়নগর থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেছেন।
চান্দুরা ইউনিয়নের সচেতন নাগরিক সমাজের উদ্যোগে জহিরের সঞ্চালনায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এলাকার সাধারণ মানুষ এই হামলায় স্তম্ভিত ও ক্ষুব্ধ। তারা সুষ্ঠু বিচার এবং এলাকার শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন। এই ঘটনা কেবল একটি ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, এটি সরকারি সম্পত্তি দখলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের উপর হামলার একটি জঘন্য উদাহরণ, যা সমাজের জন্য অশনি সংকেত।