স্টাফ রিপোর্টারঃ-
পেশায় ছিলেন দর্জি ও গার্মেন্টস কর্মী, শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি। অথচ তিনিই রাতারাতি বনে গেলেন ‘সাংবাদিক’। গলায় ঝোলানো ভুয়া পরিচয়পত্র আর হাতে বুম নিয়ে দাপিয়ে বেড়াতেন পুরো এলাকা। এই সাংবাদিকতার সাইনবোর্ড ব্যবহার করে মানুষের জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে নাক গলানো, নিরীহ মানুষকে মামলার ভয় দেখানো এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় মানহানিকর ভিডিও প্রচার করে টাকা হাতিয়ে নেওয়াই ছিল তার নিত্যদিনের কাজ। অবশেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন বহুল আলোচিত মিজানুর রহমান (৩৮), যিনি এলাকায় ‘টেইলার মিজান’ নামেই অধিক পরিচিত। তার গ্রেফতারের খবরে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন, এমনকি মিষ্টি বিতরণ করে আনন্দ প্রকাশ করেছেন।
পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিজয়নগরের স্থানীয় বাসিন্দা জসিমের সঙ্গে তার সৎ চাচাদের জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মিজানুর রহমান নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে জসিমের কাছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। বাদী জসিম সম্মানের ভয়ে প্রথমে ২ হাজার টাকা দিলেও মিজান বাকি টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন। টাকা না দিলে “মিথ্যা ও মানহানিকর নিউজ” করার হুমকি দেন তিনি। পরবর্তীতে মিজান ও তার সহযোগীরা বাদীর বাড়িতে গিয়ে ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা দাবি করলে জসিম পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মিজানুর রহমানের উত্থান সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও এলাকাবাসীর মতে, চরম আর্থিক দৈন্যতার কারণে পঞ্চম শ্রেণির পর আর পড়াশোনা করতে পারেননি মিজান। এরপর ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। হরষপুর রেলস্টেশনে ছিল তার একটি টেইলারিং এর দোকান।
অভিযোগ রয়েছে, পরবর্তীতে তিনি মানবপাচার চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বিদেশ পাঠানোর কথা বলে এলাকার বহু মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ঢাকায় গা ঢাকা দেন। ভুক্তভোগীরা যখন দিশেহারা, ঠিক তখনই মিজান এলাকায় ফিরে আসেন নতুন পরিচয়ে—‘সাংবাদিক’। পাওনাদাররা টাকা চাইতে গেলেই তিনি উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা নিউজ ও মামলার ভয় দেখাতেন। এভাবেই সাংবাদিকতাকে তিনি ঢাল হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন।
নিজ উপজেলা বিজয়নগর হলেও মিজান প্রভাব খাটিয়ে মাধবপুর উপজেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ বাগিয়ে নেন। অভিযোগ আছে, চোরাই মোটরসাইকেল ব্যবহার করে তিনি বিভিন্ন এলাকায় চষে বেড়াতেন। ভিটেবাড়ি ছাড়া দৃশ্যমান কোনো সম্পদ বা আয়ের উৎস না থাকলেও তিনি বিলাসী জীবনযাপন করতেন, যার পুরোটাই আসত চাঁদাবাজি থেকে।
এশিয়ান টিভির স্টাফ রিপোর্টার আজিজুল ইসলাম জানান, “মিজান এশিয়ান টিভির লোগো ও নাম ভাঙিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্তত ১০টি পেজ খুলে প্রতারণা করে আসছিলেন। টাকার বিনিময়ে তিনি নিউজ করতেন আবার টাকা পেলে তা ডিলিট করে দিতেন। এমনকি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপারসহ জেলার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও তিনি ভিত্তিহীন অপপ্রচার চালিয়েছেন।
মিজানুর রহমানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল বিজয়নগরের সাধারণ মানুষ। তার বিরুদ্ধে কথা বললেই সাইবার ক্রাইমের ভয় দেখাতেন তিনি। মিজানের গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকার মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়ে। থানা গেটের বাইরে ভুক্তভোগীরা জড়ো হয়ে স্লোগান দেন এবং একে অপরকে মিষ্টি মুখ করান।
পুলিশ জানায়, মিজানের বিরুদ্ধে পূর্বেও চাঁদাবাজি ও সাইবার ক্রাইমসহ একাধিক মামলা ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
ভুয়া সাংবাদিকতার মাধ্যমে সমাজের মানুষকে জিম্মি করার এই অপসংস্কৃতি রোধে মিজানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ জসীম উদ্দীন খোকন
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ২৮/বি টয়েনবি সার্কুলারর রোড, মতিঝিল বা/এ ,ঢাকা -১০০০
মোবাইল: ০১৭১১৭৮৫৯৯৮, ০১৭৩৩৭০২৮৬৩
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত