আবদুল্লাহ আল হৃদয়ঃ-
২৪ আগস্ট ২০২৫: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুটি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আয়োজিত শুনানিতে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল হট্টগোল, হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন ও অন্যান্য কমিশনারদের উপস্থিতিতেই এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের সীমানা পরিবর্তন সংক্রান্ত এক খসড়া প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে। নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি এক খসড়া প্রজ্ঞাপনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী, চান্দুরা ও হরষপুর ইউনিয়নকে বিচ্ছিন্ন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সঙ্গে সংযুক্ত করার প্রস্তাব দেয়। এই প্রস্তাব প্রকাশের পর থেকেই বিজয়নগরের ওই তিন ইউনিয়নের বাসিন্দারা তীব্র প্রতিবাদ বিক্ষোভ ও আন্দোলন করে আসছেন। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনেই থাকতে চেয়ে একাধিকবার বিক্ষোভ মিছিল এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচিও পালন করেছেন।
এই দাবি ও আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য আজ নির্বাচন কমিশনে শুনানির দিন ধার্য ছিল। শুনানি চলাকালে প্রস্তাবের পক্ষে ও বিপক্ষের আবেদনকারীরা তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করছিলেন। দুপুর পৌনে একটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসনের শুনানি চলাকালে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, যা এক পর্যায়ে হাতাহাতি ও মারামারিতে রূপ নেয়।
এই ঘটনায় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার সমর্থকদের সঙ্গে প্রতিপক্ষের সংঘর্ষের অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা মো. আতাউল্লাহ অভিযোগ করেন যে, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ও তার সমর্থকরা তার ওপর হামলা চালিয়েছেন। আতাউল্লাহর দাবি, তিনি বিজয়নগরের তিনটি ইউনিয়নকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনেই বহাল রাখার পক্ষে আবেদনকারী হিসেবে শুনানিতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, "আমি যখন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে যাই, তখন রুমিন ফারহানা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এরপর তাঁর নেতা-কর্মীরা আমাকে লাথি-ঘুষি মারে।" এই ঘটনায় তিনি নির্বাচন কমিশনে ব্যারিস্টার রুমিনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অন্যদিকে, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এই অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, "প্রথমে উনিই আমাকে ধাক্কা দেন। আমি তো একজন নারী। আমার লোকজনকে মারধর করলে তারা বসে থাকবে কেন? তারা জবাব দিয়েছে।" তিনি আরও বলেন, জনসংখ্যা বিবেচনায় নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সঠিক এবং তিনি আশা করেননি যে প্রতিপক্ষ "গুণ্ডাপাণ্ডা" নিয়ে নির্বাচন কমিশনে এসে মারামারি করবে, যা কমিশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে।
এই হট্টগোলের কারণে শুনানিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। পরে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং উভয় পক্ষকে শুনানি কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানান। এই ঘটনায় নির্বাচন ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সিইসি ও অন্যান্য কমিশনারদের সামনে এমন একটি ঘটনা সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে কেন্দ্র করে সৃষ্ট তীব্র উত্তেজনা ও রাজনৈতিক বিভাজনেরই প্রতিফলন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ জসীম উদ্দীন খোকন
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ২৮/বি টয়েনবি সার্কুলারর রোড, মতিঝিল বা/এ ,ঢাকা -১০০০
মোবাইল: ০১৭১১৭৮৫৯৯৮, ০১৭৩৩৭০২৮৬৩
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত