আবদুল্লাহ আল হৃদয়ঃ-
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, আওয়ামী লীগের বিগত ১৭ বছরের শাসনামলে গণতন্ত্রকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। তিনি শেখ হাসিনাকে ‘রক্তপিপাসু’ আখ্যা দিয়ে অভিযোগ করেন, তিনি হাজার হাজার মানুষের রক্ত পান করেছেন।
শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের লোকনাথ ট্যাংকের পাড় ময়দানে জেলা বিএনপি আয়োজিত সদস্য নবায়ন ও প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির নির্বাচনের প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, দেশের জনগণ এই পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত নয় এবং এর আগে কখনো দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় এটি দেখা যায়নি। তিনি বলেন, "পিআর পদ্ধতি কী? জনগণ বলতে পারবে? এটা কি নারকেল তেলের মতো মাথায় মাখে, না সাবানের মতো শরীরে দেয়?" তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগ জনগণের হাতে থাকবে না, শুধুমাত্র দলীয় প্রতীককে ভোট দিতে হবে, যা রাজনৈতিক দলগুলোকে আরও বেশি কর্তৃত্ববাদী করে তুলতে পারে। রিজভীর মতে, কিছু দল পিআর ও সংস্কারের কথা বলে নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে, যা বিএনপির কাছে বোধগম্য।
আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, "৩০ লক্ষ মা বোনের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এদেশকে খুটিয়ে খুটিয়ে খেয়েছে শেখ হাসিনা।" তিনি আরও বলেন, সাড়ে আট লাখ বছর আগের মানব সমাজের হিংস্রতা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের ওপর প্রয়োগ করেছেন। তিনি বলেন, "ভয়ংকর রক্তপিপাসু হাসিনাকে বাংলাদেশের মানুষ পরাজিত করেছে।"
বিএনপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান প্রসঙ্গে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, সমাজের গুণীজন, শিক্ষিত ও মেহনতি মানুষ বিএনপির সদস্য হবেন। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, "কোনো চাঁদাবাজ, দখলবাজ দলের সদস্য হতে পারবে না, যারা গণতন্ত্রের গলায় পা দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে রেখেছিল তারা বিএনপির সদস্য হতে পারবে না।"
ভবিষ্যৎ সরকার ও সংস্কার প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, নির্বাচিত সরকার এসেই সংস্কার করবে। তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফার কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশের সব সংস্কারের রূপরেখা সেখানে রয়েছে। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি শুধু সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, নির্বাহী সদস্য আহসান উদ্দিন খান শিপন, সাঈদুল হক সাঈদ, মোহাম্মদ শামীম আহমেদ এবং বিজয়নগর উপজেলার নাদিয়া পাঠান পাপন। অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। জেলা বিএনপির সিনিয়র সদস্য ও সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, সিনিয়র সহ-সভাপতি জহিরুল হক খোকন, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম সারোয়ার খোকন, অ্যাডভোকেট মো. শফিকুল ইসলাম, এ বি এম মমিনুল হক, অ্যাডভোকেট আনিছুর রহমান মঞ্জু এবং অ্যাডভোকেট তরিকুল ইসলাম রুমা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী আজম ও সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান শাহীন কর্মসূচিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
এদিনের কর্মসূচিতে বিজয়নগর উপজেলা বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ ছিল বিশেষভাবে লক্ষণীয়। বিজয়নগর উপজেলা বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল, কৃষক দল ও তাঁতীদলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থকের উপস্থিতি সমাবেশকে নতুন মাত্রা দেয়। উপজেলা বিএনপির নেতা জমির হোসেন দস্তগীর, এডভোকেট ইমাম হোসেন, ইকবাল মাষ্টার, শিপন মিয়া, ডাঃ রফিকুল ইসলাম, শাহ আলম মোল্লা, এইচ এম জহিরুল ইসলাম, গিয়াস উদ্দিন, ছায়েদ খন্দকার, কামাল হোসেন এবং হাসান ভূইয়া সহ অন্যান্য নেতারা তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে যোগদান করেন।
শ্রমিকদলের আবদুল কাদির এবং চান্দুরা ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হেলাল উদ্দিন, সাহাদাত, সোহাগ খন্দকার, মোঃ রিপন মিয়া, শিশু মিয়া, আবু তাহের ও টুটন মিয়ার নেতৃত্বে খণ্ড খণ্ড মিছিল সমাবেশস্থলে এসে মিলিত হয়। ইছাপুরা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমিম মেম্বার এবং সাধারণ সম্পাদক এনাম খানের নেতৃত্বেও একটি বড় মিছিল কর্মসূচিতে যোগ দেয়। উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়ন থেকেও বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এই সদস্য সংগ্রহ অভিযানকে সফল করতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এই কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি তার বক্তব্যে সদস্য সংগ্রহ অভিযানের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
জেলা বিএনপির নেতারা তাদের বক্তব্যে বলেন, এই সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচি দলকে তৃণমূল পর্যায়ে আরও শক্তিশালী করবে। তারা আরও বলেন, বিজয়নগর উপজেলাসহ জেলার প্রতিটি ইউনিটের নেতাকর্মীদের এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রমাণ করে যে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপির ভিত্তি অত্যন্ত মজবুত। এই কর্মসূচি আগামী দিনে দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ জসীম উদ্দীন খোকন
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ২৮/বি টয়েনবি সার্কুলারর রোড, মতিঝিল বা/এ ,ঢাকা -১০০০
মোবাইল: ০১৭১১৭৮৫৯৯৮, ০১৭৩৩৭০২৮৬৩
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত