আবদুল্লাহ আল হৃদয়ঃ-
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় জাহিদুল ইসলাম স্মিথ নামে এক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে এক নিরীহ কৃষকের উপার্জনের একমাত্র সম্বল একটি ঘোড়াকে ১৫ দিন আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী কৃষক মনতাজ মিয়া (৫৮) এই ঘটনায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন এবং ন্যায়বিচারের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। অভিযুক্ত জাহিদুল ইসলাম স্মিথ উপজেলার বুধন্তি ইউনিয়নের বারঘরিয়া গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে এবং একজন সাবেক চেয়ারম্যানের পুত্র হওয়ায় এলাকায় তার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে বলে জানা গেছে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ২০শে জুলাই, শ্রীনগর গ্রামের বাসিন্দা মনতাজ মিয়া তার ঘোড়াটিকে ঘাস খাওয়ার জন্য জমিতে বেঁধে রেখেছিলেন। এ সময় ঘোড়াটি ঘটনাক্রমে অভিযুক্ত স্মিথ এর ঘাসের জমিতে পা দিলে তার লোকজন সেটিকে ধরে নিয়ে যায়। মনতাজ মিয়ার অভিযোগ, স্মিথ তার বাড়িতে ঘোড়াটিকে প্রায় ১৫ দিন অনাহারে আটকে রাখেন এবং নির্মম নির্যাতন করেন।
ভুক্তভোগী মনতাজ মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, "আমার উপার্জনের সম্বলটি ফেরত আনতে বারবার অনুরোধ করেও কোনো লাভ হয়নি। তিনি আমার কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন।" তিনি আরও জানান, এলাকার মেম্বারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে অনুরোধ করেও টাকা ছাড়া ঘোড়াটি ফেরত দিতে অস্বীকার করেন স্মিথ।
অবশেষে, গত ২রা আগস্ট, প্রায় অর্ধমৃত এবং ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় ঘোড়াটিকে মনতাজ মিয়ার জমির পাশে রেখে যাওয়া হয়। এর ঘণ্টাখানেক পরেই অসহায় প্রাণীটি মারা যায়। দুটি ঘোড়া দিয়ে জমি চাষ করে দুই ছেলে ও ছয় মেয়ের সংসার চালানো মনতাজ মিয়া তার শেষ সম্বল হারিয়ে এখন দিশেহারা। তিনি বলেন, "আমার একমাত্র সম্বল ঘোড়াটিকে মেরে স্মিথ আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। আমি এখন কীভাবে পরিবারের ভরণপোষণ করব? আমি এই জুলুমের বিচার চাই।"
এই ঘটনায় এলাকার আরও অনেকে স্মিথের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। শাহানা বেগম নামে এক নারী জানান, "আমার একটি গরুর বাছুরও ধরে নিয়ে গিয়েছিল। আমি হাতে-পায়ে ধরে অনেক কষ্টে ছাড়িয়ে এনেছি। ঘোড়াটির জন্য সে ১০ হাজার টাকা দাবি করেছিল। সে খুবই জুলুমবাজ এবং প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা সাধারণ মানুষ অসহায়।" মামুন নামে আরেকজন কিডনি রোগী জানান, তার চারটি ভেড়া স্মিথ জোরপূর্বক ধরে নিয়ে গেলেও তিনি কোনো বিচার পাননি।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য (মেম্বার) শফিক মিয়া জানান, "ঘোড়াটি আটক করার কথা শুনে আমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলেছিলাম। এরপর কী হয়েছে তা আমার জানা নেই।"
ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত জাহিদুল ইসলাম স্মিথের সাথে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি, ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বিজয়নগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, "ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।"
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবার এই অমানবিক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষী ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ জসীম উদ্দীন খোকন
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ২৮/বি টয়েনবি সার্কুলারর রোড, মতিঝিল বা/এ ,ঢাকা -১০০০
মোবাইল: ০১৭১১৭৮৫৯৯৮, ০১৭৩৩৭০২৮৬৩
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত